জমি ক্রয়- বিক্রয়ে যেসব বিষয় যাচাই করা আবশ্যাকঃ
রাজিব সাহেব দীর্ঘ ১২ বছর যাবৎ বাড্ডাতে থাকে একটা প্রাইভেট কোম্পানীতে চাকুরি করেতেন আগে। বউ গত বছর সরকারী চাকুরী হতে রিটায়ার্ড করেছেন। দুজনের জমানো টাকায় একখন্ড জমি কিনে বাড়ি বানিয়ে বাকী জীবনটা নিজের ছাদের নিচে কাটাতে চেয়েছিলেন সন্তান নিয়ে।
জীবনের শেষ ইচ্ছেটা পূরণ করতে জমিও কিনে নিয়েছেন ইতিমধ্যে। পানির দামে পেয়েছেন তাই কষ্ট হলেও বাজেটের চেয়ে আরো ২ কাঠা বেশিই নিয়েছেন। গত সোমবার রেজিস্ট্রশন এর কথা ছিল, এলাকার ঘনিষ্ঠ বড় ভাই তাই টাকা পয়সা সিংহভাগ পরিশোধ করে দিয়েছেন। আসলে বিক্রেতার টাকার অনেক আর্জেন্সি ছিল।
সকাল সকাল নাস্তা-পানি খেয়ে বউ সমেত পৌছাল রেজিঃ অফিসে, বিক্রেতার দেখা নাই। দুপুরের দিকে ভদ্র লোক আসলেন। রেজিস্টার দলিলের তফসিল দেখে বললেন ” এটা তো খাস খতিয়ানের জমি, সরকারের জমি আপনে বিক্রী করবেন কিভাবে? কোর্টের রায় আছে? ডিক্রী? “
বিক্রেতার তালবাহানা শুরু। অহরহ এসব প্রতারণা ও হয়রানীর ঘটনা সমাজের প্রতি কোণেই ঘটছে। আদালতে মামলা ফেঁপে ফুঁসে উঠছে, তবু সতকর্তা ছড়াচ্ছেনা মানুষের মাঝে। বর্তমানে ভূমি সংক্রান্ত সকল অফিস, এসি ল্যান্ড অফিস মানুষকে সতর্ক করার জন্য সচেতনতা মূলক পোষ্টার গলায় বেঁধে দাড়িছে। তবু কমছেনা অসাধূ চক্রের কু-মন্ত্রনা।
আরো পড়ুন:
- বিদেশ থেকে আমমোক্তার নামা দলিলের মাধ্যমে জমি বিক্রি করার পদ্ধতি
- ভূমি উন্নয়ন কর না দিলে যেসব সমস্যা হয়
- হেবা দলিল রেজিস্ট্রী এবং বাতিল করার সহজ নিয়ম
- চেকের মামলা করার আগে সাবধান থাকুন !
- তালাক প্রত্যাহার বা তালাক বাতিল করার নিয়ম
চলুন দেখি নিরাপদ ও নিষ্কন্টক জমি ক্রয়- বিক্রয়ে কোন বিষয় গুলো সুক্ষভাবে যাচাই করা আবশ্যাকঃ
১। বিক্রেতার মালিকানা সঠিক আছে কি না?
২। সম্পত্তিতে বিক্রেতার দখল আছে কি না?
৩। সর্বশেষ রেকর্ড অনুযায়ী খতিয়ান ও দাগ নম্বর সঠিক আছে কি না?
৪। হাল রেকর্ড ও সাবেক রেকর্ড এর মধ্যে মিল রয়েছে কি না?
৫। হিস্যা মোতাবেক বিক্রেতার প্রাপ্য অংশ সঠিক আছে কি না?
৬। রেন্ট সার্টিফিকেট মামলায় জড়িত সম্পত্তি কি না?
৭। হাল সন পর্যন্ত ভূমি উন্নয়ন কর (খাজনা) পরিশোধ আছে কি না?
৮। বিক্রেতার নামে নামজারি করা আছে কি না?
৯। অর্পিত/পরিত্যক্ত/অধিগ্রহণকৃত সম্পত্তি কি না?
১০। সরকারি কোন প্রতিষ্ঠানের সম্পত্তি কি না?
১১। নৃ-তাত্ত্বিক জাতি গোষ্ঠীর সম্পত্তি বিক্রয়ের ক্ষেত্রে জেলা প্রশাসক মহোদয়ের “বিক্রয় অনুমতিপত্র” আছে কি না?
১২। খাস জমি কি না?
১৩। বিক্রিত জমিতে সরকারি কোন স্বার্থ জড়িত আছে কি না?
১৪। সর্বসাধারণের ব্যবহার্য বা পাবলিক ইজমেন্ট সম্পত্তি কি না?
১৫। নাবালকের সম্পত্তি কি না?
১৬। নাবালকের সম্পত্তি বিক্রয়ের ক্ষেত্রে আইনগত অভিভাবক বা আদালত কর্তৃক নিযুক্ত অভিভাবক নির্ধারণ করা আছে কি না?
১৭। বিক্রেতা সম্পত্তি উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্য হইলে নিবন্ধিত বণ্টননামা দলিল আছে কি না?
১৮। হিন্দু কন্যা সন্তান/বিধবা স্ত্রী এর “জীবন স্বত্ব” শর্তে প্রাপ্য সম্পত্তি কি না?
১৯। সম্পত্তি বিক্রয়/হস্তান্তর এর ক্ষেত্রে আদালতের নিষেধাজ্ঞা আছে কি না?
২০। সমর্পিত বা বিক্রেতার ৬০/১০০ বিঘা সিলিং বহির্ভূত সম্পত্তি কি না?
২১। নকশা মোতাবেক জমির অবস্থান ও পরিমাণ সঠিক আছে কি না?
২২। দলিলে বর্ণিত তফসিল অনুযায়ী রেকর্ড সঠিক আছে কি না?
২৩। সম্পত্তি বন্ধক দেয়া আছে কি না?
২৪। বিক্রেতা বায়না বা বিক্রয় চুক্তি সম্পাদন করেছেন কি না?
২৫। বিক্রেতার প্রদর্শিত খতিয়ান ও দলিল সংশ্লিষ্ট ভূমি অফিসে রক্ষিত রেকর্ডপত্রের সাথে মিল আছে কি না?
আরো পড়ুন:
তালাক দেওয়ার বৈধ নিয়ম |
জমির ১৫ প্রকার দলিল সহজে চেনার উপায় |
জমি বেদখল হলে কী করবেন |
মামলা থাকলে কি চাকরী হয়? |
জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন সম্পর্কিত ২০ টি কমন প্রশ্ন-উত্তর |
উপরোক্ত বিষয়গুলো ভালভাবে বিশ্লষেণ করে জমি ক্রয় করতে হবে। আপনি যদি কাগজপত্র না বোঝেন তাহলে একজন ভাল আইনজীবীর পরামর্শ নিয়ে তারপর জমি ক্রয়ের জন্য অগ্রসর হোন।