মুসলিম উত্তরাধিকার আইনে সম্পত্তি বন্টনের নিয়ম
মুসলিম আইনে উত্তারাধিকার সম্পত্তি বন্টনের জন্য সুনির্দিষ্ট এবং সুস্পষ্ট বিধান রয়েছে। মুসলিম উত্তরাধিকার আইন কুরআন, সুন্নাহ, ইজমা ও কিয়াসের উপর প্রতিষ্ঠিত। মুসলিম আইনে মোতাবেক সম্পত্তি বিলি বা বন্টনের নিয়মে ফারায়েজ বলে। মুসলিম স্কুল অব ল এর বিভিন্ন শাখায় সম্পত্তি বন্টনের আলাদা নিয়ম প্রচলিত আছে। যেহেতু আমাদের দেশে সুন্নি মুসলমানদের অনুসারী বেশী কাজেই, নিম্নে হানাফী আইন মোতাবেক উত্তরাধিকার উল্লেখ করা হল-
হানাফি আইনমতে মৃত ব্যক্তির দাফন-কাফন এর খরচ পরিচালনা, ঋণ পরিশোধ, উইল বা অছিয়ত করে থাকলে সে ব্যক্তিকে সম্পত্তি প্রদানের পর যে সম্পত্তি অবশিষ্ট থাকবে, তা জীবিত উত্তরাধিকারদের মধ্যে নিম্নের পদ্ধতি অনুযায়ী বণ্টিত হবে।
হানাফি আইনে প্রাথমিক উত্তরাধিকারী মোট- ৬ জন, যারা কখনো সম্পত্তির ওয়ারিশ প্রাপ্তি হতে বঞ্চিত হয় না।
যথা-
(১) পিতা
(২) মাতা
(৩) স্বামী
(৪) স্ত্রী
(৫) পুত্র
(৬) কন্যা।
আরো পড়ুন:
বর্নিত এই ৬ জন উত্তরাধিকারীর অংশ এবং অন্যন্যদের অংশ নিম্নলিখিত পদ্ধতিতে বন্টিত হবে-
পিতা (মৃত ব্যক্তির সম্পদের উপর তাঁর পিতা ৩ (তিন) প্রকারে সম্পদ পাবেন) | ১। মৃত ব্যক্তির পুত্র, পুত্রের পুত্র কিংবা পুত্রের পুত্রের পুত্র এভাবে যত নিচেই হোক না কেন যদি থাকে, তবে মৃত ব্যক্তির পিতা পাবেন সম্পদের ছয় ভাগের এক ভাগ (১/৬)। ২। মৃত ব্যক্তির কোন পুত্র, পুত্রের পুত্র কিংবা পুত্রের পুত্রের পুত্র এভাবে যত নিচেই হোক যদি না থাকে, কেবল কন্যা থাকে; তবে মৃত ব্যক্তির পিতা মোট সম্পত্তির ছয় ভাগের এক ভাগ ( ১/৬) পাবেন এবং কন্যাদের ও অন্যান্যদের দেয়ার পর যে সম্পত্তি অবশিষ্ট থাকবে তাও পাবেন। ৩। যদি মৃত ব্যক্তির কোন সন্তান না থাকে, তবে মৃত ব্যক্তির বাকী অংশীদারদের দেয়ার পর অবশিষ্ট সকল সম্পত্তি পিতা পাবেন। |
মাতা (মৃত ব্যক্তির মাতা ৩ (তিন) ভাবে সম্পদ পাবেন) | ১। যদি মৃত ব্যক্তির সন্তান বা পুত্রের সন্তানাদি, যত নিম্নেরই হউক, থাকে অথবা যদি পূর্ণ, বৈমাত্রেয় বা বৈপিত্রেয় ভাই বা বোন থাকে; তবে মাতা মোট সম্পত্তির ছয় ভাগের এক ভাগ ( ১/৬) পাবেন। ২। যদি মৃত ব্যক্তির কোন সন্তান বা পুত্রের সন্তানাদি, যত নিম্নের হউক না থাকে এবং যদি একজনের বেশি ভাই বা বোন না থাকে; তবে মাতা তিন ভাগের এক ভাগ (১/৩) পাবেন। ৩। যদি মৃত ব্যক্তির কোন সন্তান বা পুত্রের সন্তানাদি, যত নিম্নের হউক না থাকে অথবা কমপক্ষে দুইজন ভাইবোন না থাকে এবং যদি মৃত ব্যক্তির স্বামী বা স্ত্রী অংশ দেয়ার পর যা অবশিষ্ট থাকবে তার তিন ভাগের এক ভাগ ( ১/৩) মাতা পাবেন। |
স্বামী (স্বামী ২ (দুই) ভাবে মৃত স্ত্রীর সম্পত্তি পাবে) | ১। যদি মৃত ব্যক্তির সন্তান-সন্ততি থাকে তবে স্বামী পাবে এক চতুর্থাংশ। ২। যদি মৃত ব্যক্তির সন্তান-সন্ততি না থাকে তবে স্বামী পাবে অর্ধেক সম্পত্তি। |
স্ত্রী (মৃত স্বামীর সম্পত্তি ২ (দুই) ভাবে পাবে) | ১। যদি মৃত ব্যক্তির এবং তাঁর স্ত্রীর সন্তান বা পুত্রের সন্তান থাকে তবে স্ত্রী স্বামীর সম্পত্তির আট ভাগের এক ভাগ (১/৮) পাবেন। ২।যদি মৃত ব্যক্তি এবং তাঁর স্ত্রীর সংসারে কোন সন্তান না থাকে তাহলে স্ত্রী মোট সম্পত্তির চার ভাগের এক ভাগ (১/৪) পাবেন। |
পুত্র | পুত্র সকল ক্ষেত্রেই মৃত ব্যক্তির সম্পদ পেয়ে থাকে। এছাড়া, মৃত ব্যক্তির সম্পত্তি সকলের অংশ ভাগের পর অবশিষ্ট সকল অংশ পুত্র-কন্যারা পাবে। এক্ষেত্রে পুত্র যে পরিমান সম্পত্তি পাবে, কন্যা তার অর্ধেক পরিমাণ পাবে। তবে যদি কন্যা না থাকে, বাকী সম্পত্তি সম্পূর্ণ অংশ পুত্র পাবে। |
কন্যা | মৃতের কন্যা ৩ (তিন) নিয়মে মৃতের সম্পদ পেয়ে থাকে, যথা- ১। যদি মৃত ব্যক্তির একজন কন্যা থাকে, তবে সে সম্পদের দুইভাগের একভাগ (১/২) পাবে। ২। যদি মৃত ব্যক্তির একাধিক কন্যা থাকে, তবে সব কন্যা একত্রে তিন ভাগের দুই ভাগ সম্পত্তি পাবে। ৩। যদি মৃত ব্যক্তির পুত্র-কন্যা উভয়েই থাকে, তবে পুত্র যে পরিমাণ সম্পত্তি পাবে, কন্যা তাঁর অর্ধেক পাবে। |
দাদা | পিতার পিতা অর্থাৎ পিতামহ বা এর যত উপরে হোক না কেন, নিম্নলিখিত ভাবে মৃতের সম্পত্তি পাবে- ১। মৃতের পিতা জীবিত থাকলে দাদা সম্পত্তি পাবে না। ২। মৃতের পুত্র বা পুত্রের পুত্র থাকলে দাদা মোট সম্পত্তির (১/৬) ছয় ভাগের এক ভাগ পাবে। ৩। মৃতের পুত্র সন্তান না থাকলে বা পুত্রের সন্তান (এভাবে নিচের দিকে) শুধু কন্যা হলে কন্যা সন্তানের সংগে দাদা মোট সম্পত্তির (১/৬) ছয় ভাগের এক ভাগ পাবে এবং কন্যা বা পুত্রের কন্যাদের অংশ প্রদানের পর যা বাকী থাকবে, দাদা আসাবা হিসেবে তাও পাবে। ৪। মৃতের কোন সন্তান বা সন্তানের সন্তান (এভাবে নিচের দিকে) না থাকলে, অন্যান্যদের দেওয়ার পর দাদা আসাবা হিসেবে বাকী সমুদয় সম্পত্তি পাবে। |
নানী ও দাদী | প্রকৃত নানী ও দাদী (যত উপরেই হোক) ১। নানী বা দাদীগণ মৃতের সম্পত্তির (১/৬) ছয় ভাগের এক ভাগ পাবে। ২। মৃতের পিতা বা মাতা জীবিত থাকলে নানী বা দাদীগণ কোন সম্পত্তি পাবে না। |
পুত্রের কন্যা | পুত্রের কন্যা বা পুত্রের পুত্রের কন্যার অবস্থা (এভাবে যত নিচেই হোক) নিম্নলিখিত ধরনের হবে- ১। মৃত ব্যক্তির কন্যা থাকলে, পুত্রের কন্যা কোন সম্পত্তি পাবে না। ২। মৃত ব্যক্তির একাধিক কন্যা জীবিত থাকলে, পুত্রের কন্যাগণ কোন সম্পত্তি পাবে না। ৩। মৃত ব্যক্তির একটি মাত্র কন্যা থাকলে মৃত পুত্রের কন্যাগণ (১/৬) ছয় ভাগের এক ভাগ পাবে। ৪।পুত্রের কন্যা একজন হলে সম্পত্তির দুই ভাগের একভাগ পাবে। ৫। পুত্রের কন্যার সংখ্যা একাধিক হলে সকলে মিলে সম্পত্তির তিন ভাগের দুই ভাগ পাবে। ৬। মৃত ব্যক্তির পুত্রের পুত্র বা তার পুত্র (যত নিচে হোক) থাকলে, পুত্রের কন্যাগণ পুত্রের সাথে আসাবা হিসেবে সম্পত্তি প্রাপ্ত হবে এবং কন্যা, পুত্রের অর্ধেক সম্পত্তি পাবে। |
বৈপিত্রেয় ভাই | বৈপিত্রেয় ভাই তিন ভাবে মৃতের সম্পত্তি পাবে, যথা- ১। একজন হলে (১/৬) ছয় ভাগের এক ভাগ পাবে। ২। দুই বা ততোধিক হলে (১/৩) তিন ভাগের এক ভাগ পাবে। ৩। মৃতের সন্তান বা পুত্রের সন্তান (এভাবে যত নিচে হোক), পিতা বা দাদা জীবিত থাকলে বৈপিত্রেয় বা বৈমাত্রেয় ভাই বা বোন কোন সম্পত্তি পাবে না। |
কোন উত্তরাধিকারী সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত হবে
যদি সে-
(ক) যার সম্পত্তি তাকে হত্যা করে
(খ) ভিন্ন ধর্ম গ্রহণ করে।
আরো পড়ুন:
LET US HELP YOU
Consult with our Specialist Lawyer
Phone- 01929125100
E-mail – [email protected]
See Credentials: Linkedin Portfolio AIN BISHAROD– (A Legist Law Firm)