কখন অপরাধ করলেও অপরাধী হবেন না ?
আইন জানেন আর নাই বা জানেন, প্রচলিত আইনে কোন অপরাধ করে থাকলে আপনি শাস্তি পাবেন এটাই স্বাভাবিক। কারণ আইনের অজ্ঞতা ক্ষমার পাবার জন্য কোন অজুহাত বলে বিবেচনা করা হয় না।
এটা পৃথিবীতে প্রচলিত আইনের একটি স্বীকৃত নিয়ম। তবে হাঁ, একেবারে সকল ক্ষেত্রে কোন কিছু করলেই যে আপনি অপরাধী হয়ে যাবেন তাও কিন্তু না।
কিছু কিছু ক্ষেত্র রয়েছে যেখানে আপনি নিজের বা সম্পত্তির সুরক্ষা ও নিরাপত্তার জন্য কোন অপরাধ করে থাকলেও আপনাকে এর জন্য শাস্তি পেতে হবে না।
কারণ আপনার অধিকার আছে, যে কোন আসন্ন বিপদ এড়াবার জন্য আপনিও কোন প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারবেন নিজ বা অন্যের নিরাপত্তার ও সম্পত্তি রক্ষার জন্য।
কোন কোন ক্ষেত্রে আপনি সেই সকল অধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন
এই সকল ক্ষেত্র নিয়ে আমাদের দেশে ১৮৬০ সালের প্রচলিত দণ্ডবিধির ধারা ৯৬ থেকে ধারা ১০৬ পর্যন্ত এই সকল আত্মরক্ষার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
১। ব্যক্তিগত প্রতিরক্ষা
দণ্ডবিধির ৯৬ ধারাতে আছে ব্যক্তিগত প্রতিরক্ষার জন্য আপনি কোন অধিকার প্রয়োগ করে থাকলে আপনার করা কোন কাজই আইনে অপরাধ বলে গণ্য করা হবে না।
২। স্থাবর কিংবা অস্থাবর সম্পত্তি রক্ষার জন্য
ধারা ৯৭তে আছে মানুষের শরীরের জন্য ক্ষতিকর এমন যে কোন অপরাধের বিরুদ্ধে নিজের ও অন্যের শরীর রক্ষার অধিকার আপনার আছে। চুরি, দস্যুতা, অনিষ্ট সাধন বা অনধিকার প্রবেশের মাধ্যমে নিজের বা অপর ব্যক্তির স্থাবর কিংবা অস্থাবর সম্পত্তি রক্ষার জন্যও আপনি এই প্রতিরক্ষার অধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন।
আরো পড়ুন:
তবে সেই অধিকার আপনাকে দণ্ডবিধির ৯৯ ধারার বর্ণিত বিধি নিষেধ অনুযায়ী প্রয়োগ করতে হবে।তাই আগে দেখে নেই ৯৯ ধারায় কি আছে। ৯৯ ধারায় বলা হয়েছে, সরকারীভাবে ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তি অথবা তাঁর নির্দেশে অন্য কোন ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তি সরল বিশ্বাসে যদি এমন কোন কাজ করে যাতে করে অন্তত কারো মৃত্যু বা গুরুতর আঘাতের আশঙ্কা না থাকে তবে সেই ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে আপনার ব্যক্তিগত প্রতিরক্ষার অধিকার থাকবে না।
যদিও সংশ্লিষ্ট ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তির কাজটি আইনের দৃষ্টিতে অযৌক্তিক হয়। আর যদি আসন্ন বিপদ ঠেকাতে আপনার সরকারের আশ্রয় নেওয়ার সময় থাকে তখনও আপনি আত্মরক্ষার অধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন না। এই অধিকার আপনি যতটুকু নিজের আত্মরক্ষার জন্য প্রয়োজন কোন অবস্থায় তার অতিরিক্ত প্রয়োগ করতে পারবেন না।
যেমন আপনি চোরের চুরি ঠেকাতে গিয়ে তাঁকে খুন করে বসতে পারেন না। এমন কিছু করলে এর জন্য আপনাকে আইনে নির্ধারিত শাস্তি পেতে হবে।
তাই সাবধান! ফিরে আসি ৯৮ ধারায়। এখানে উল্লেখ করা হয়েছে মানসিক ভাবে বিপর্যস্ততা, অক্ষমতা বা মাতাল হলে কিংবা পাগলামির কারণে কেউ কোন অপরাধ করলে তার সেই কাজের জন্য তাকে অপরাধী করা যাবে না। কিন্তু ঐ মানসিকভাবে অক্ষম, বিপর্যস্ত ব্যক্তি বা পাগলের হাত থেকে আপনার যুক্তিসঙ্গত প্রতিরক্ষার অধিকার থাকবে।
৩। ধর্ষণ, কাম লালসা, অপহরণ থেকে রক্ষা পেতে
১০০ ধারায় আছে কোন কোন ক্ষেত্রে আপনি আত্মরক্ষা করতে গিয়ে অন্য কারো মৃত্যু পর্যন্ত ঘটাতে পারেন। আর এগুলো হল নিজের নিশ্চিত মৃত্যু ঠেকাতে, মারাত্মক আঘাত থেকে যেখানে পরবর্তীতে আপনার মৃত্যু হতে পারে এমন, ধর্ষণ থেকে বাঁচতে, অস্বাভাবিক কাম লালসার হাত থেকে রক্ষা পেতে, অপহরণের হাত থেকে রক্ষা পেতে এবং কেউ যদি এমন ভাবে আপনাকে আটক করতে পারে বলে মনে হয় যেখান থেকে আপনি সরকারী কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে আর কোন সাহায্য নিতে পারবেন না তখন।
৪। আক্রমণকারী প্রতিহত করতে
তবে ১০১ ধারা অনুযায়ী সম্পূর্ণ ইচ্ছাকৃতভাবে আক্রমণকারীর মৃত্যু ঘটানো যাবে না যতক্ষণ না পর্যন্ত অন্যকোন ভাবে আত্মরক্ষা করা যায়। ১০২ ধারা অনুযায়ী এই অধিকার অব্যাহত থাকবে যতক্ষণ পর্যন্ত আপনার দেহ বিপন্ন হওয়ার আশঙ্কা থাকবে। আশঙ্কা কেটে যাওয়ার পর ঐ অধিকার আর আপনি পাবেন না।
১০৩ ধারায় উল্লেখ আছে কখন আপনি সম্পত্তি রক্ষা করতে গিয়ে কারো মৃত্যু ঘটাতে বা অন্য কোন ক্ষতি করতে পারেন। তবে অবশ্যই আপনাকে ৯৯ ধারার বর্ণিত বিধি নিষেধের কথা মনে রেখে তা করতে হবে। এগুলো হল দস্যুতার শিকার হলে, কেউ রাতে অপথে গৃহে প্রবেশে করলে, বাসা বা সম্পত্তি সংরক্ষণের জন্য ব্যবহৃত বিল্ডিং, তাঁবু, জাহাজে আগুন লাগা থেকে ক্ষতি এড়াতে।
এছাড়াও চুরি, অনিষ্ট বা ঘরে অনধিকার প্রবেশের ক্ষেত্রে যদি এমন কোন অবস্থার উদ্ভব হয় যে সেখানে আত্মরক্ষার অধিকার প্রয়োগ করা না হলে কারো মৃত্যু বা গুরুতর আহত হওয়ার যৌক্তিক আশঙ্কা থাকে।
৫। চুরি, ক্ষতি বা অনধিকার প্রবেশ
১০৪ ধারায় আছে চুরি, ক্ষতি বা অনধিকার প্রবেশ যদি উল্লিখিত উপরের মত ভয়ংকর না হয় তবে আত্মরক্ষার অধিকার প্রয়োগের ক্ষেত্রে ৯৯ ধারায় বর্ণিত বিধি নিষেধ অনুযায়ী দুষ্কৃতিকারীর অন্য কোন ক্ষতি করা গেলেও অন্তত কারো মৃত্যু ঘটানো যাবে না।
৬। সম্পত্তি রক্ষার ক্ষেত্রে
১০৫ ধারায় আছে, কখন কারো সম্পত্তি রক্ষার ক্ষেত্রে এই অধিকারের শুরু হয় এবং কতক্ষণ পর্যন্ত এই অধিকার অব্যাহত থাকবে। যেমন সংশ্লিষ্ট সম্পত্তির ক্ষেত্রে ক্ষতির আশংকা দেখা দেওয়ার সাথে সাথে প্রতিরক্ষার অধিকার শুরু হবে।
চুরির ক্ষেত্রে চোর পালিয়ে না যাওয়া পর্যন্ত বা সরকারী কর্তৃপক্ষের সাহায্য লাভ না করা পর্যন্ত অথবা ঐ সম্পত্তি উদ্ধার না করা পর্যন্ত আপনার প্রতিরক্ষার অধিকার থাকবে। দস্যুতার ক্ষেত্রে কোন ব্যক্তির মৃত্যু বা আঘাত করা বা অবৈধ অবরোধের চেষ্টা অব্যাহত থাকা পর্যন্ত প্রতিরক্ষার অধিকার থাকবে।
অনধিকার প্রবেশ বা অনিষ্ট সাধনের ক্ষেত্রে এর চেষ্টা অব্যাহত থাকা পর্যন্ত আর রাতের বেলা চুরির ক্ষেত্রে যতক্ষণ পর্যন্ত ঘরে কারো অনধিকার প্রবেশ অব্যাহত থাকবে আপনার ব্যক্তিগত প্রতিরক্ষার অধিকার ততক্ষণ পর্যন্ত থাকবে। চোর চুরি করে চলে যাওয়ার পর আর আপনার ঐ অধিকার থাকবে না।
৭। মৃত্যু হতে পারে এমন কোন আক্রমনে, আত্মরক্ষার করতে
১০৬ ধারায় আছে আপনার মৃত্যু হতে পারে এমন কোন আক্রমনে, আত্মরক্ষার করতে গিয়ে যদি কোন নিরাপরাধ মানুষেরও ক্ষতি হওয়ার ঝুঁকি থাকে তাহলেও আপনি এমন ঝুঁকি নিয়ে আত্মরক্ষার অধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন। যেমন আপনি নিজেকে বাঁচাতে কোন কোন উচ্ছৃঙ্খল জনতার উপর গুলি চালাতে পারেন। যদি ঐ জনতার ভেতরে থাকা কোন শিশু ও যদি আহত বা নিহত হয় তবে তার জন্য আপনি দায়ী হবেন না।
বিদেশ থেকে আমমোক্তার নামা দলিলের মাধ্যমে জমি বিক্রি করার পদ্ধতি
হাবিব সাহেব ইতালি প্রবাসী। দীর্ঘ সময়ের জমানো টাকায় ঢাকার সাভারে ৪ কাঠা জমি কিনেছেন ২০০৮ সালে । পারিবারিক জরূরী প্রয়োজনে নগদ টাকা দরকার। এত টাকা জোগাড় করতে জমি বিক্রী করা ছাড়া আর কোন উপায় নেই তার। যেহেতু হাবিব সাহেব বর্তমানে ইতালি আছেন তাই দেশে এসে জমি বিক্রী করা সম্ভব নয়। এ রকম পরিস্থীতিতে হাবিব সাহেব…
ভূমি উন্নয়ন কর না দিলে যেসব সমস্যা হয়
বাংলাদেশ সরকারের রাজস্ব আদায়ের খাত সমূহের মধ্যে ভূমি উন্নয়ন কর একটি এবং এই খাত থেকে প্রতিবছর বিপুল পরিমাণ রাজস্ব সরকার আহরণ করে থাকে। যেহেতু ভূমির মালিকানা ব্যাক্তি নামে হলেও এর প্রকৃত মালিক মূলত বাংলাদেশ সরকার কাজেই সে জমি ব্যবহারের জন্য বাংলাদেশ সরকারকে খাজনা প্রদান করতে হয়।
হেবা দলিল রেজিস্ট্রী এবং বাতিল করার সহজ নিয়ম
কেউ যদি জিবিত অবস্থায় তাহার সম্পত্তি সম্পূর্ণভাবে কারো নামে লিখে দিতে চায় তাহলে দানপত্র দলিল এর মাধ্যমে সহজেই হেবা করে দিতে পারবে। আমাদের দেশে যা হেবা দলিল নামে অধিক পরিচিত। দান শব্দের আরবী প্রতিশব্দ হেবা। কোন অর্থ বা বিনিময় ছাড়া কোন ব্যক্তি স্বেচ্ছায় যে দলিলের মাধ্যমে কোন সম্পত্তি হস্তান্তর করেন তাকে দানপত্র বলে।