নামজারীর নিয়ম জানুন, নিজের নামজারী নিজে করুন
নামজারী কী ?
বিভিন্ন কারনে জমির মালিকানা পরিবর্তন হয়। জমি হস্তান্তরের পর নতুন মালিকের নামে জমির নামজারী করা জরুরী। হস্তান্তরের পর পুরোনো মালিকের স্থলে নতুন মালিকের নাম অর্ন্তভূক্তি করাকে নামজারী / মিউটেশন বলে। সম্পত্তি হস্তান্তরের পর নতুন মালিকের নামে নামজারী না করলে সম্পত্তি ভোগ-দখল, খাজনা প্রদান, বেচা-বিক্রী ও ব্যাংক লোন পেতে জটিলতার সৃষ্টি হয়। বর্তমানে, জমি হস্তান্তরের সাথে সাথে ক্রয়কৃত সম্পত্তির নামজারী করার বিষয়ে জনমনে সচেতনতা সৃষ্টি হলেও অনেকেই নামজারীর পক্রিয়া সম্পর্কে বিস্তারিত জানেন না। ফলস্বরূপ বিভিন্ন ধরনের হয়রানি ও বিড়ম্বনার স্বীকার হচ্ছে অনেকে।
নামজারী কোথায় করতে হয়?
সহকারী কমিশনার (ভূমি) অফিসে নামজারির জন্য আবেদন করতে হয়। অনেকেই ভুল করে তহসিল অফিসে নামজারীর আবেদন করেন কিন্তু নামাজারী কেবল সহকারী কমিশনার (ভূমি) অফিসে হয়ে থাকে।
সহকারী কমিশনার (ভূমি) অফিসে নামজারী সহকারী পদের একজন কর্মকর্তা নামজারীর দায়িত্বে থাকেন। নাজির পদের একজন নামজারির ফি জমা নেন। সহকারী সেটেলমেন্ট কর্মকর্তা অর্থাৎ নাজির নামজারির আবেদন দাখিলের পর তা তদন্তের দায়িত্বে থাকেন।
কীভাবে আবেদন করতে হয়
সহকারী কমিশনার (ভূমি) অফিস থেকে নামজারীর জন্য নির্ধারিত আবেদন ফরম সংগ্রহ করে পূর্ণাঙ্গভাবে পূরন করে আবেদন করতে হবে। যে সম্পত্তি বা জমির নামজারী করতে ইচ্ছুক সে সম্পত্তি বা জমির বিস্তারিত পরিচয় দিতে হবে।
আবেদন পত্রে যা যা আবশ্যক:
১। আবেদন কারীর পূর্ণ নাম ও ঠিকানা
২।রেজিস্ট্রিকৃত হস্তান্তর দলিল যেমন, সাব-কবলা, হেবা, উইল ইত্যাদি দলিলের নম্বর ও সাল স্পষ্ট থাকতে হবে।
৩। দলিলের অনুলিপি, ভায়া দলিলের ফটোকপি (যদি থাকে)
৪। পরচা বা খতিয়ানের অনুলিপি
৫। ডিসিআর এবং ভূমি-উন্নয়ন কর পরিশোধের রসিদ
৬। বণ্টননামা দলিল (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে)
৭। কোন ওয়ারিশান জমির নামজারী করতে চাইলে ওয়ারিশান সনদপত্র (তিন মাসের মধ্যে ইস্যু করা) জমা দিতে হবে ।
৮। পূর্বের মালিকের নামে নামজারী থাকলে তার ফটোকপি (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে)
৯। কোনো রায় বা ডিক্রির বলে নামজারি করলে উক্ত ডিক্রি বা রায়ের অনুলিপি
১০। আবেদনকারী অথবা আবেদনকারীর প্রতিনিধির পাসপোর্ট আকারের ২ কপি ছবি
নামজারী আবেদন কে করবে?
১। নামজারীর আবেদন আবেদনকারী নিজেই করতে পারেন
২। আবেদনকারী আইনজীবী বা প্রতিনিধি নিয়োগ করেও আবেদন করতে পারেন।
নামজারি আবেদন নামঞ্জুর হলে কী করবেন ?
নামজারী আবেদন করা হলে কাগজপত্র বা মালিকানা সংক্রান্ত বিভিন্ন ঝামেলার কারনে আবেদন প্রত্যাখ্যান হতে পারে। নামজারী আবেদন বাতিল বা প্রত্যাখান হলে সহকারী কমিশনারের (ভূমি) এর আদেশের বিরুদ্ধে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) বরাবরে আদেশের ৩০ দিনের মধ্যে আপিল করতে হবে।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের (রাজস্ব) এর আদেশের বিরুদ্ধে অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (রাজস্ব) বরাবর আপিল করার সুযোগ আছে কাছে এবং তা করতে হয় আদেশের ৩০ দিনের মধ্যে। অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (রাজস্ব) আদালতের আদেশের বিরুদ্ধে ভূমি আপিল বোর্ডে আদেশের তারিখ হতে ৯০ দিনের মধ্যে আপিল করা যায়।
উল্লেখ্য যে, ক্ষমতাপ্রাপ্ত কোনো কর্মকর্তা তাঁর নিজের ইচ্ছায় নথি তলব করে সংশোধনের আদেশ দিতে পারেন। এ পদ্ধতি রিভিশন নামে পরিচিত। এছাড়া রিভিউর পথও খোলা আছে। রিভিউ মানে হচ্ছে পুনর্বিবেচনা করা। দলিলপত্রে কোনো ভুল পর্যবেক্ষণ হয়েছে বলে মনে করলে কিংবা আবেদন বাতিল করলে ৩০ দিনের মধ্যে রিভিউর আবেদন করতে হয়। যে কর্মকর্তা আদেশ দিয়েছেন, তাঁর বরাবরই রিভিউ করতে হবে। তবে রিভিউ আবেদন করা হলে আর আপিল করা যায় না।
বাংলাদেশ সরকারের বর্তমান নিয়ম অনুযায়ী মহানগর এলাকার মধ্যে ৬০ কর্মদিবসে এবং অন্যান্য এলাকার ক্ষেত্রে ৪৫ কর্মদিবসের মধ্যে নামজারি-প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। দালাল ও প্রতারক চক্রের খপ্পরে পড়ে অনেকে অল্প সময়ে নামজারীর করার আশায় মোটা অংকের টাকা খরচ করেন যা একই সাথে অন্যয় ও বোকামী। নিজের নামজারী নিজে করুন, যেকোন বিষয়ে আপনাকে সাহায্য করার জন্য সরকারী কমিশনার (ভূমি) বাধ্য। কোন হয়রানী বা জটিলতার সৃষ্টি হলে সরকারী কমিশনার (ভূমি) কে অবগত করুন।
বিদেশ থেকে আমমোক্তার নামা দলিলের মাধ্যমে জমি বিক্রি করার পদ্ধতি
হাবিব সাহেব ইতালি প্রবাসী। দীর্ঘ সময়ের জমানো টাকায় ঢাকার সাভারে ৪ কাঠা জমি কিনেছেন ২০০৮ সালে । পারিবারিক জরূরী প্রয়োজনে নগদ টাকা দরকার। এত টাকা জোগাড় করতে জমি বিক্রী করা ছাড়া আর কোন উপায় নেই তার। যেহেতু হাবিব সাহেব বর্তমানে ইতালি আছেন তাই দেশে এসে জমি বিক্রী করা সম্ভব নয়। এ রকম পরিস্থীতিতে হাবিব সাহেব…
ভূমি উন্নয়ন কর না দিলে যেসব সমস্যা হয়
বাংলাদেশ সরকারের রাজস্ব আদায়ের খাত সমূহের মধ্যে ভূমি উন্নয়ন কর একটি এবং এই খাত থেকে প্রতিবছর বিপুল পরিমাণ রাজস্ব সরকার আহরণ করে থাকে। যেহেতু ভূমির মালিকানা ব্যাক্তি নামে হলেও এর প্রকৃত মালিক মূলত বাংলাদেশ সরকার কাজেই সে জমি ব্যবহারের জন্য বাংলাদেশ সরকারকে খাজনা প্রদান করতে হয়।
হেবা দলিল রেজিস্ট্রী এবং বাতিল করার সহজ নিয়ম
কেউ যদি জিবিত অবস্থায় তাহার সম্পত্তি সম্পূর্ণভাবে কারো নামে লিখে দিতে চায় তাহলে দানপত্র দলিল এর মাধ্যমে সহজেই হেবা করে দিতে পারবে। আমাদের দেশে যা হেবা দলিল নামে অধিক পরিচিত। দান শব্দের আরবী প্রতিশব্দ হেবা। কোন অর্থ বা বিনিময় ছাড়া কোন ব্যক্তি স্বেচ্ছায় যে দলিলের মাধ্যমে কোন সম্পত্তি হস্তান্তর করেন তাকে দানপত্র বলে।
চেকের মামলা করার আগে সাবধান থাকুন !
চেকের মামলায় মহামাণ্য হাইকোর্ট ডিভিশান অতি সম্প্রতি একটি যুগান্তকারী রায় প্রদান করেছেন। রায়ে চেকে লেনদেন সংক্রান্ত কোন লিখিত ডকুমেন্ট বা দুই পক্ষের কনসিডারেশন কে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। কাজেই, চেকের লেনদেনের ক্ষেত্রে সম্ভব হলে স্ট্যাম্পে লিখিত চুক্তি করে নেয়া ভাল। তবে, চেকের মামলা করতে চুক্তি থাকতেই হবে এ ধারনা ভূল।
তালাক প্রত্যাহার বা তালাক বাতিল করার নিয়ম
তালাক দিলেই সাথে সাথে সেই তালাক কারযকর হয় না। মুসলিম শরীয়া আইন এবং পারিবারিক আইনের বিধান মতে তালাক দিবার ৯০ দিন পর সেই তালাক কার্যকর হবে। ৯০ দিনের এই সময়কে ইদ্দতকালীন পিরিয়ড বলা হয়। তালাক দেবার পর তালাক দাতা যদি মনে করে তার সিদ্ধান্ত ভূল এবং সে এই তালাক বাতিল করতে চায় তাহলে তালাক গ্রহীতার…
জমির দলিল, খতিয়ান, নকশা, মৌজা ম্যাপ কোনটা কোন অফিসে পাবেন
জমি বেচা-কেনা বা হস্তান্তর করা, জমির অনুকূলে ব্যাংক হইতে বন্ধক রেখে লোন উঠাতে গেলে বা সরকারী বন্দোবস্তের টাকা উঠাতে এমন কি জমিতে বিল্ডিং করার জন্য প্লান পাশ করাতে গেলেও এসব কাগজপত্র প্রয়োজন হয়।