স্বামী কর্তৃক তালাক নোটিশ ফরম পূরণের নিয়ম
স্ত্রীকে তালাক দেবার ক্ষেত্রে স্বামী কর্তৃক তালাক নোটিশ ফরম পূরনের নিয়ম যথাযথ ভাবে জানা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শখের বশে বা খামখেয়ালী থেকে কেউ তালাক দেওয়ার মত গর্হিত সিদ্ধান্ত নেয়না। সংসার জীবনে চলতে গেলে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিভিন্ন কুট-তর্ক, ভুল-বুঝাবুঝি এবং জটিলতা হতেই পারে। সাংসারিক সব জটিলতা যখন সহ্যসীমা বা আত্বমর্যাদাবোধ ছাপিয়ে যায় তখন শান্তির খোঁজে মানুষ তালাকের সিদ্ধান্ত নেয়।
তালাক যে কোন কারনেই হতে পারে তবে সেক্ষেত্রে যথাযথ আইনি পদ্ধতি আবলম্বন করাটা সবচেয়ে জরুরী।
জনপ্রিয় টপিকসমূহ
তালাক প্রদান করলেও পরবর্তী বিবাহিত জীবনে বা বিদ্যমান সংসারে তার প্রভাব রয়ে যায়। ভবিষ্যতে যেকোন জটিলতা এড়াতে তালাক দেওয়ার নিয়ম যথাযথ ভাবে মেনে তালাকের নোটিশ পূরণ করা খুব জরুরী।
চলুন দেখি তালাকের নোটিশ প্রদানের ক্ষেত্রে কোন বিষয়গুলো বিবেচনায় রেখে তালাকের নোটিশ প্রদান করা জরুরী। মূল আলোচনায় যাবার আগে নিচে প্রদত্ত তালাক নোটিশের খালি নমুনা কপিটি ভাল করে লক্ষ্য করুন। এই কপিটি কাজী অফিসের স্বাক্ষরিত তবে এলাকা ভেদে নোটিশের ভিন্নতা থাকতে পারে। কাজী অফিসের তালাক নোটিশ এবং আইনজীবী কর্তৃক প্রদত্ত তালাক নোটিশের মধ্যে অনেক পার্থক্য থাকে। আজকে আমরা কাজী অফিসের তালাক নোটিশের ফরমেট নিয়ে আলোচনা করব।
ডিভোর্স পেপার বা তালাক নোটিশ এর নমুনা
তালাক নোটিশ পূরণের নিয়ম
স্বামী কর্তৃক স্ত্রী কে তালাক প্রদানের ক্ষেত্রে নোটিশে নিন্মোক্ত বিষয় সুনির্দিষ্ট ভাবে উল্লেখ করতে হবে। যেমন,
১। স্বামীর পূর্ণ নাম ( কাবিন নামার সাদৃশ্য- ভোটার আইডি, জন্ম নিবন্ধন ও পাসপোর্ট মোতাবেক)
২। পিতা-মাতার নাম
৩। স্থায়ী ও বর্তমান ঠিকানা
৪। বিবাহের তারিখ ও মোহরানার অংশ
৫। কাবিন নামার নাম্বার এবং বিবাহ রেজিস্ট্রীর তারিখ (কাজী অফিসের নাম উল্লেখ পূর্বক)
৬। স্ত্রীর নাম, পিতা ও মাতার নাম
৭। স্ত্রীর বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানা
৮। তালাক প্রদানের আইন সম্মত কারন এক বা একাধিক ( বিস্তারিত পড়ুন)
৯। যেদিন তালাক প্রদান করা হয়েছে
১০। কোন বিশেষ বক্তব্য, শর্তাদি বা ফরমান
১১। তালাক প্রদানের প্রত্যক্ষ স্বাক্ষী ( ২ জন)
১২। তালাক দাতার স্পষ্টাক্ষরে স্বাক্ষর
১৩। অনুলিপি প্রাপকের পরিচয়
তালাক নোটিশ কে প্রদান করতে পারে?
মুসলিম পারিবারিক আইন -১৯৬১ এর ৭(১) ধারা অনুযায়ী তালাক নোটিশ কে পাঠাতে পারবেন তা স্পষ্টভাবে উল্লেখ নেই। আইনে উল্লেখ আছে- যে ব্যক্তি তালাক দিবে তিনি লিখিত ভাবে তালাক নোটিশ তালাক প্রাপ্ত স্ত্রী এবং তার স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান/পৌরসভার চেয়ারম্যান/সিটি কর্পোরেশন পাঠাবেন।
আমাদের প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী তালাক নোটিশ প্রদান করতে কাজী এবং আইনজীবী শরণাপন্ন হতে হয়। যদিও আইনে কাজী বা আইনজীবীর কথা উল্লেখ নেই তবু অফিসিয়াল উপায়ে আইনি পদ্ধতি মেনে তালাক প্রদানের জন্য আইনজীবীর মাধ্যমে তালাক দেয়া হয়। তালাক নোটিশ পূরণের পর তা যথাযথ ভাবে সংশ্লিষ্ট প্রাপকের কাছ প্রেরন করা এবং ইদ্দত কাল অর্থাৎ ৯০ পর তা কালাক রেজিস্ট্রার এর মাধ্যমে রেজিস্ট্রি করানোর জন্য আইনজীবীর দ্বারস্ত হতে হয়।
তালাকের নোটিশ না পাঠালে কি হবে?
তালাক নোটিশ বর্নিত সময়ের মধ্যে না পাঠালে ১ বছরের কারাদন্ড বা ১০ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয়দন্ড হবে। নোটিশ প্রাপ্তির ৩০ দিনের মধ্যে চেয়ারম্যান বা মেয়র সালিশী পরিষদ গঠন করে আপোষের ব্যাবস্থা নিবেন।
স্বামী তালাক নোটিশ ৯০ দিনের মধ্যে প্রত্যাহার না করলে তালাক কার্যকর হবে এবং ৯০ দিনের মধ্যে নোটিশ প্রত্যাহার করলে তালাক কার্যকর হবে না।
তালাক প্রদানের সময় স্ত্রী যদি গর্ভবতী থাকে তাহলে তালাক কার্যকর হবে সন্তান প্রসব হওয়ার পর।