জমির দলিল, খতিয়ান, নকশা, মৌজা ম্যাপ কোনটা কোন অফিসে পাবেন
অনেকেই আমাদের কাছে বিভিন্ন বিষয়ে জানতে চান। জমি-জমা সংক্রান্ত যেসব প্রশ্ন আমাদের কাছে আসে তার মধ্যে শীর্ষে থাকে জমির দলিল, খতিয়ান, নকশা, মৌজা ম্যাপ কোনটা কোন অফিসে পাবেন এই বিষয়টা।
জমি জমার বিষয়ে যাদের মোটামুটি ধারনা আছে তাদের অনেকেই আমাদের কাছে জানতে চান যে, কোন অফিসে গেলে জমির কোন কাগজ উঠানো যাবে। একটি জমির কিছু অবশ্য প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস থাকে যা কোন কারণে হারিয়ে গেলে বা নষ্ট হলে পুণরায় আবার সংগ্রহ করা প্রয়োজন হয়। আবার জমি বেচা-কেনা বা হস্তান্তর করা, জমির অনুকূলে ব্যাংক হইতে বন্ধক রেখে লোন উঠাতে গেলে বা সরকারী বন্দোবস্তের টাকা উঠাতে এমন কি জমিতে বিল্ডিং করার জন্য প্লান পাশ করাতে গেলেও এসব কাগজপত্র প্রয়োজন হয়।
জমির প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের তালিকা:
কোন জমির মালিকানা, দখল বা প্রকৃত অবস্থান যাচাই করার জন্য নিন্মোক্ত কাগজপত্র সংগ্রহের প্রয়োজন হয়। যেমন,
১। দলিল।
২। পর্চা বা খতিয়ান।
৩। খাজনা বা নামজারীর কাগজপত্র
৪। ম্যাপ বা নকশা।
৫। বরাদ্ধপত্র, লীজ দলিল এবং দখল হস্তান্তর পত্র
জমির দলিল কোন অফিসে পাবেন?
জমির দলিল মালিকানার প্রাথমিক প্রমান। জমি মালিকানা সংক্রান্ত বৃত্তান্ত বা কালানুক্রমিক ইতিহাস এবং কিভাবে মালিকানা অর্জিত হয়েছে তা নির্ধারণের জন্য দলিল এর বিকল্প নেই। দলিলের বিভিন্ন প্রকার ও শ্রেণী আছে। তবে দলিল যে শ্রেণীর হোক না কেন যে কোন রেজির্স্টাড দলিল উত্তোলনের প্রয়োজন হলে সংশ্লিষ্ট সাব-রেজিস্ট্রী অফিস হতে দলিলের অবিকল নকল বা সার্টিফাইড কপি সংগ্রহ করা যায়।
১। সাব–রেজিস্ট্রি অফিস
সাব-রেজিস্ট্রী অফিস হল জমির দলিল সহ বিভিন্ন চুক্তিপত্র, এগ্রিমেন্ট, অংশিদারী দলিল ও অন্যন্য নিবন্ধনযোগ্য দলিল রেজিস্ট্রি ও সম্পাদনের জন্য দ্বায়িত্বপ্রাপ্ত অফিস। এই অফিস হতে নতুন দলিলের নকল ও মূল দলিল পাওয়া যায় এবং সাম্প্রতিক সময়ে রেজিস্ট্রিকৃত দলিলের নকল পাওয়া যায়। বহু পুরাতন দলিল বা বায়া দলিল এই অফিসে পাওয়া যায় না।
২। জেলা রেজিস্ট্রি অফিস বা সদর রেকর্ড রুম
এই অফিসে নতুন বা পুরাতন দলিলের সার্টিফাইড কপি বা নকল পাওয়া যায়। বায়া দলিল উত্তোলনের জন্য সদর রেকর্ডরূমের দ্বারস্ত হতে হয়। তবে, এলাকা ভেদে রেকর্ডরূমে দলিল হস্তান্তরের সময় ভিন্ন ভিন্ন হয়।
জমির পর্চা বা খতিয়ান কোথায় পাবেন
জমির পর্চা বা খতিয়ান মূলত চারটি অফিসে পাবেন। তা হলো,
(ক) ইউনিয়ন ভূমি অফিস
(খ) উপজেলা ভূমি অফিস
(গ) জেলা প্রশাসকের র্কাযলয় বা ডিসি অফিস
(ঘ) সেটেলমেন্ট অফিস
ইউনিয়ন ভূমি অফিস বা তহশিল অফিস
ইউনিয়ন ভূমি অফিসের কাজ জমির খাজনা আদায়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ। এসি ল্যান্ড অফিসের বিভিন্ন আদেশ এবং রিপোর্ট প্রদান ও খাজনা গ্রহণ করা ছাড়া তহসিল অফিসের আর কোন কাজ নেই। তহসিল অফিস জমির খতিয়ান বা পর্চা প্রদান করেনা। প্রয়োজনে, খতিয়ান নাম্বার এবং খড়সা কপি সংগ্রহ করা যায় এই অফিস থেকে।জমির খতিয়ান নাম্বার জানা না থাকলে এই অফিস থেকে জেনে নিতে পারবেন। জমির খাজনা বা ভূমি উন্নয়ন কর প্রদান এবং এই বিষয়ে বিভিন্ন তথ্য অনুসন্ধানের জন্য তহসিল অফিসের গুরুত্ব অনেক।
এসি ল্যান্ড অফিস বা উপজেলা ভূমি অফিস
উপজেলা ভূমি অফিস জমির মালিকানার হালনাগাদ তথ্য সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করে। নতুন মালিকানা মোতাবেক নামজারী বা খারিজ বা মিউটেশন করা এই অফিসের গুরু দ্বায়িত্ব। তহসিল অফিসের মত এই অফিসেও খসরা খতিয়ান তুলতে পারবেন এবং ভূমির মালিকানা সংক্রান্ত হালনাগাদ তথ্য সংগ্রহ করতে পারবেন। উপজেলা ভূমি অফিস খতিয়ানের সার্টিফাইড পর্চা প্রদান করে না।
জেলা প্রশাসকের র্কাযলয় বা ডিসি অফিস
এই অফিস হতে পর্চা বা খতিয়ানের সার্টিফাইড কপি সংরক্ষণ করতে পারবেন। জেলা প্রশাসকের র্কাযলয় বা ডিসি অফিস প্রদত্ত খতিয়ান এর গুরুত্ব সর্বাধিক। হালনাগাদ খতিয়ান সহ বিগত সকল রেকর্ড এক সাথে জেলা প্রশাসকের র্কাযলয় বা ডিসি অফিস হতে সংগ্রহ করা যায়।
সেটেলমেন্ট অফিস
সদ্য আগত রেকর্ড বা জরিপের পর্চা / খতিয়ান সেটেলমেন্ট অফিস হতে সংগ্রহ করা যায়। এছাড়া এই অফিস হতে আপনি বিভিন্ন ম্যাপ ও সার্ভে রিপোর্ট সংগ্রহ করতে পারবেন।
জমির মৌজা ম্যাপ বা নকশা কোথায় পাবেন?
জমির মৌজা ভিত্তিক ম্যাপ বা নকশা সংগ্রহের দুইটি অফিসে যেতে হবে, তা হলো
১। জেলা প্রশাসকের র্কাযলয় বা ডিসি অফিস
জেলা প্রশাসকের র্কাযলয় বা ডিসি অফিস হতে জমির সিএস, এসএ, আরএস, বিএস, বিআরএস বা সিটি জরীপ খতিয়ান অনুযায়ী মৌজা ম্যাপ সংগ্রহ করতে পারবেন।নির্দিষ্ট ফি প্রদান করে আবেদন করলে দ্রুত সময়ে মৌজা ম্যাপ পাওয়া যায়।
২। ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তর, ঢাকা।
ঢাকাস্থ তেজগাঁও সাতরাস্তার মোড়ে অবস্থিত ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তর। সারা বাংলাদেশের যে কোনো মৌজার সিএস, এসএ, আরএস, বিএস, জেলা ম্যাপ, বাংলাদেশ ম্যাপ ইত্যাদি উক্ত অফিস হতে তুলতে পারবেন। সারা বাংলাদেশের যে কোন ম্যাপ এই অফিসে পাওয়া যায়। ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তর হতে ম্যাপ তুলতে মোট খরচ আবেদন ফরম, কোর্ট ফি , ডি.সি.আর মোট = ৫৫০/= টাকা মাত্র। আবেদন করার পর ৫ থেকে ৮ কার্য দিবসের ভিতরে আবেদনকারী বরাবরে ম্যাপ সরবরাহ করা হয়।